সমস্ত লেখাগুলি

সতীদাহ প্রথা -
ডি. মন্ডল
Nov. 20, 2024 | সামাজিক ইস্যু | views:484 | likes:0 | share: 0 | comments:0

বিধবাকে তার মৃত স্বামীর সাথে পুড়িয়ে মারার প্রথাটি হল সতীদাহ প্রথা। এরিস্টোবুলুস লেখা থেকে বোঝা যায়, গুপ্ত সাম্রাজ্যের (খ্রিষ্টাব্দ ৪০০) আগে থেকেই এ প্রথার প্রচলন ছিল। প্রাচীন অথর্ববেদে এবং বিষ্ণু স্মৃতিতে প্রতীকী সতীদাহের উল্লেখ থাকলেও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ গুলিতে সতীদাহের উল্লেখ পাওয়া যায় না।

এই প্রথা বৃদ্ধি পায়, ১৬৮০-১৮৩০ সালের মধ্যে, কারণ বিধবাদের উত্তরাধিকারের অধিকার ছিল সেজন্য পরোক্ষভাবে মৃত্যুর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল। তাদেরকে পরজন্মের সুফল এবং এই মানুষটিকে স্বামী রুপে পেতে পারে এমন সব কিছু বোঝানো হতো। এছাড়া মুসলিম শাসনের অধীনে দাসত্বের কারণে দারিদ্র্যতা এবং চরম লজ্জাজনক পরিণতির পরিবর্তে সম্মানজনক সমাধান হিসাবে অনেকেই সতীদাহ বেছে নেয়।

১৯ শতকের প্রথম দিকে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই প্রথাটির বিরুদ্ধে কলকাতায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তা সত্ত্বেও ১৮০৩ সালে রাজধানীর  ৩০ মাইলের মধ্যে ৪৩৮টি সতীদাহ হয়। এবং ১৮১৫  এবং ১৮১৮  সালের মধ্যে, বাংলায় সতীদাহের ঘটনার সংখ্যা ৩৭৭ থেকে দ্বিগুণ হয়ে ৮৩৯-এ এসে  দাঁড়ায়। অবশেষে কেরির মতো ধর্ম প্রচারক এবং রাম মোহন রায়ের মতো হিন্দু সংস্কারকদের মতামতকে সমর্থন করে  ভারতের ব্রিটিশ গভর্নর-জেনারেল লর্ড উইলিয়ামের বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ সালে হিন্দু বিধবাদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারার প্রথাকে ফৌজদারি আদালত কর্তৃক শাস্তিযোগ্য বলে ঘোষণা করেন।

ব্রাহ্মণদের সতীদাহ প্রথা চালু রাখার পেছনে কিছু অসৎ উদ্দেশ্য ছিল যেমন..

১) মৃত ব্যক্তির বহু বিধবার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না নেওয়ার নোংরা মানসিকতা।

২) সে সময়ে বিধবাদের সম্পত্তি সমাজের নিয়ন্ত্রকগন অর্থাৎ ব্রাহ্মণরা ভোগ করতে পারত।

৩)  জীবন্ত দগ্ধ হওয়া সহ্য করা, সতীমাতার মর্যাদা অর্জন করা।

ভবিষ্যতে ওই গ্রামে ওই সতী মাতার নামে কোন মানুষ ঐ সতীমাতার কাছে প্রার্থনা করলে তার মনস্কামনা পূর্ণ হবে এমন ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করেছিল ব্রাহ্মণরাই।

কিন্তু দেখা যেত অনেকেই অল্প বয়সে বিধবা হত, ফলে তারা আরো কিছুদিনের জন্য বেঁচে থাকতে চাইত। এমন সব নারীরা চিতায় ওঠার আগে বেঁকে বসতো। আসলে খুব কম নারীই ছিল যারা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনের দিকে পরলোকের মোহে পড়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে যেত। কেউ কেউ চিৎকার করে কাঁদত, ছেড়ে দিতে বলত। এই আওয়াজ যেন কেউ না শোনে তাই শবযাত্রীরা ঢোল, মাদল, বাঁশির আওয়াজে ভরিয়ে তুলত। অনিচ্ছুক মেয়েদের খাওয়ানো হত আফিম জাতীয় ওষুধ, যেন তারা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। কাউকে মাথার পেছন দিকে আঘাত করে অজ্ঞান করা হত। আর বোঝানো হত এই স্ত্রী পরবর্তী জন্মে উঁচু বংশে জন্মাবে, হতে পারবে এই স্বামীরই স্ত্রী।

পরের জন্মের নামে এভাবে ১৫০০ থেকে ১৮০০ সালের মধ্যে কয়েক হাজার নারীকে জীবিত পুড়িয়ে মারা হয়।

 এবার কি বলবেন সতীদাহ প্রথা ছিল স্বেচ্ছামৃত্যু?

না, এটা কোন স্বেচ্ছামৃত্যু ছিলনা এটা ছিল মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হিংস মানসিকতার পরিচয়।

যা সীমাবদ্ধ ছিল: উত্তরে- গাঙ্গেয় উপত্যকা, পাঞ্জাব এবং রাজস্থান;  পশ্চিমে- দক্ষিণ কোঙ্কন অঞ্চলে;  এবং দক্ষিণে- মাদুরাই ও বিজয়নগরে। ধন্যবাদ জানাই রাজা রামমোহন রায় কে যিনি আমাদের এই হিংস্র পশুদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন।

আমাদের কথা


এই দুর্নিবার সময়েও লেখনী চালিয়ে যাওয়ার মত ধীশক্তি ধরে রেখে মুক্তচিন্তকরা নিরন্তর লিখে চলেছেন। তাঁদের লেখাগুলি সংকলিত করে প্রকাশিত হয়ে চলেছে চেতনার অন্বেষণে পত্রিকা। যা দুই বাংলার পাঠকদের কাছে দ্রুত সমাদৃত হয়। এই পথ চলার একটি ধাপে এসে অন্বেষণ পাবলিশার্স পথ চলা শুরু করেছে মূলত মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্ক বইগুলিকে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে। আমাদের কথা বলতে লেখক, পাঠক সবাই মিলিয়েই আমরা।

ওয়েবসাইট প্রসঙ্গে


এটি মূলত বিজ্ঞানমনস্কতা, যুক্তিবাদ চর্চা এবং বইপত্রের প্ল্যাটফর্ম। এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তিবাদীদের লেখার চর্চাকে অনুপ্ররণা যোগাবে। লগইন করে আপনিও লিখতে পারবেন, ওয়েবসাইটটি সমস্ত বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদীদের উদ্দেশ্যে নির্মিত।

যোগাযোগ


Email: yuktibadira@gmail.com

WhatsApp: +91-9433794-113


Website visit count:
86929